বেশ কয়েকদিন ধরিয়া চিন্তা করিতেছিলাম নতুন ব্লগ লিখিবো। কিন্তু সময় করিয়া উঠিতে পারিতেছিলাম না। তাছাড়া কি লিখিবো সেটাও মাথায় আসিতেছিল না। চারিদিকে এত নেগেটিভিটি দেখিয়া পসিটিভ কিছু মাথায় আসেনা আজকাল। যাইহোক, আজকে ল্যাপটপটা নিয়া বসিয়াই পরিলাম। যা থাকে কপালে, আগে লিখা শুরু করি। পরে বুঝিব কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
অন্য সবার মতই আমারো মাঝে মাঝে মন মেজাজ ভাল থাকেনা। তারপরেও সবার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব হইয়া ওঠে না। আবার মাঝে মাঝে হয়ত খুব ফুর্তিতে থাকি। তখন কথাবার্তা হয় আবার আরেক ধরনের। এই ধরনের অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ অথবা ফুর্তির সময় কথোপকথন গুলা বেশ ইন্টারেস্টিং হয়। আজ সেই ধরনের কিছু কনভারসেশন তুলিয়া ধরিলাম।
কথোপকথন ০১
জনৈকঃ হাই সুমন ভাই। কি করছেন?
আমিঃ কি আর করব? এক মাতারির সাথে টেলিফোনে কথা বলছি।
জনৈকঃ হাহাহাহা। আপনি যে মাঝে মধ্যে কি বলেন! আপনি তো এখন আমার সাথে কথা বলছেন!
আমিঃ হেইডাই :-/
কথোপকথন ০২
জনৈকঃ না সুমন ভাই ... আপনার এই কথাটা আমি মানতে পারলাম না। আপনারা যা পারেন, আমরাও তা পারি !
আমিঃ শোন, তোমার কথাটাও আমি মানতে পারলাম না। আমরা এক না, ছেলে এবং মেয়ে, কখনই এক হতে পারে না। অধিকারের প্রশ্ন আলাদা, কিন্তু আমরা এরকম অনেক কিছু পারি, যেটা তোমরা জীবনেও পারবানা। এবং ব্যাপারটা ভাইস-ভারসা ।
জনৈকঃ রিয়েলি?
আমিঃ হু, রিয়েলি।
জনৈকঃ ওকে, একটা এক্সাম্পল দিন তো...
আমিঃ আমরা... মানে ছেলেরা, বিচি চুলকানোর যেই মজাটা পাই, সেটা তোমরা জীবনেও পাবানা! কোন কাজ কাম না থাকলে আমরা অনর্গল বিচি চুলকাইতে পারি। আহ! কি যে শান্তি!... যাউগ্যা... আমি এখন যাই, বিচি চুলকাই, তোমার সাথে হিন্দি চুলের আলাপ করার চেয়ে বিচি চুলকানো অনেক বেশি শান্তির, বুজছো?
কথোপকথন ০৩
জনৈকঃ আপনি কি আশিকি-২ মুভিটা দেখেছেন?
আমিঃ নাহ। আমি হিন্দি মুভি দেখি না।
জনৈকঃ আপনারা এরকম কেন বলুন তো? হিন্দি মানেই তো আর খারাপ কিছু নয়। এটা একটা ভাষা। এখন বলিয়ুড কত ভাল কোয়ালিটির মুভি বানায় জানেন?
আমিঃ শোনো, আমার হিন্দি আর উর্দু ভাষা নিয়া অ্যালার্জি আছে। এই ২ টা ভাষা শুনলেই আমার লিটারেলি গা চুলকাইতে থাকে। প্রেশার বাইরা যায়। মনে হয় সবকিছু ভাইঙ্গা ফালাই। অনেকগুলো কারনের মাঝে এটা একটা আসল কারন, এই জন্যেই আমি হিন্দি / উর্দু মুভি দেখি না। গান শোনার তো প্রশ্নই উঠে না।
জনৈকঃ এটা একটা কথা বললেন? অনেক ভাল ভাল হিন্দি গান আছে।
আমিঃ অবশ্যই আছে। বাট আমি আবার একটু দেশপ্রেমিক আছি। বুঝলা কিনা? এই জন্যে শুনি না।
জনৈকঃ এই ব্যাপারে আমার কিছু কথা আছে সুমন ভাই! আপনারা দেশপ্রেমের দোহাই দিয়া হিন্দি গান শুনেন না। কিন্তু ঠিকই ইংলিশ গান শুনেন! এইটার যৌক্তিকতা কি?
আমিঃ হাহাহা। যুক্তি যদি চাও তাহলে অনেক যুক্তি দেয়া যায়। শোনো, আমি একজন বাংলাদেশি মিউজিশিয়ান। কত টাকা এই বাংলাদেশের মিউজিশিয়ানদের জন্য খরচ কর তোমরা? শাহরুখ খান দেশে আইসা আমাদের স্টেডিয়াম এ গানের সাথে নাচানাচি কইরা কোটি কোটি টাকা নিয়া যায়, আর তোমরা সেই নাচানাচি দেখতে যেই টাকা খরচ কর তার অর্ধেকও আমাদের পিছনে খরচ করনা। ইন্ডিয়া পাকিস্তান থেকে আমরা এই সেক্টরে কত টাকা কামাই? এইসব নিয়া কথা বললেই তোমরা বল যে তারা ভাল তাই খরচ করি। কেন? বাংলাদেশে ভাল মিউজিক হয় না? ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান কবে বাংলাদেশের কয়টা মিউজিশিয়ান কে নিয়ে গেছে কনসার্ট করানর জন্যে? এবং নিয়ে গেলেও কত টাকা দেয়? কলকাতায় কি বাংলাদেশ ব্যান্ডের ফ্যান নাই? প্রচুর আছে! ফেসবুকে প্রচুর মেসেজ পাই ফ্যানদের কাছ থেকে। তারাও আমাদের দেখতে চায় সেখানে। তারপরেও বাংলাদেশিরা কেন ইন্ডিয়া/পাকিস্তানে শো পায় না? তারা তো বাংলাদেশিদের ডিম্যান্ড থাকা সত্তেও বেইল দেয় না। তোমাদের এত পাছা চাটাচাটি কেন? আগে তারা আমাদের কালচার/গান কে সম্মান দেয়া শিখুক দেন আশা কইরো যে আমরাও তাদের মিউজিক বা কালচার কে সম্মান দিব।
কথোপকথন ০৪
জনৈকঃ হ্যালো সুমন ভাই। চিনতে পেরেছেন?
আমিঃ না
জনৈকঃ আপনাকে ৫ টা চান্স দিলাম। বলুন তো আমি কে?
আমিঃ মুড়ি খাও!
কথোপকথন ০৫
জনৈকঃ কোথায় ছিলেন সুমন ভাই? অনেক্ষন থেকে কল দিচ্ছি। ফোন ধরলেন না যে?
আমিঃ টয়লেট এ ছিলাম। হাইগ্যা আইলাম। প্রায় দেড় কেজি! :D
জনৈকঃ ছি। আপনি মাঝে মাঝে এত বাজে কথা বলেন!
আমিঃ বাজে কথা কি বললাম? তুমি হাগো না? পায়খানা দেখ নাই জীবনে? তুমি হাগলে কি চকলেট আইসক্রিম বের হয় নাকি? ক্যালভিন ক্লাইন এর গন্ধ বের হয়?
জনৈকঃ ইইইইউ! কি বলেন এইগুলা!
আমিঃ হ বুঝছি! আমরা হাগলে 'ইইইউ ইইইউ' আর শাহরুখ খান হাগলে 'মিউ মিউ'! যত্তসব!
কথোপকথন ০৬
জনৈকঃ সুমন ভাই। আপনি এত সুন্দর গান কিভাবে গান?
আমিঃ মুখ দিয়া
জনৈকঃ আপনি অনেক ফাজিল।
আমিঃ হু আমি জানি।
জনৈকঃ একটু টিপস দিবেন?
আমিঃ না
জনৈকঃ কেন সুমন ভাই?
আমিঃ আমি ছেলেদের কে টিপ দেই না। :-/
কথোপকথন ০৭
জনৈকঃ আপনি অনন্ত জলিল এর নতুন মুভি টা দেখেছেন?
আমিঃ না। কিন্তু দেখবো
জনৈকঃ দেইখেন! হাসতে হাসতে মারা যাবেন! এত্ত ফানি!
আমিঃ আচ্ছা
জনৈকঃ লোকটা এরকম কেন বলুন তো?
আমিঃ কেমন?
জনৈকঃ এই যে দেখেন না? কিসব ফালতু মুভি বানায়। ঠিকমত কথাও বলতে পারে না
আমিঃ অসুবিধা কোথায়? সবাই তো মুভি দেখছে
জনৈকঃ এইসব মুভি করে কেন?
আমিঃ এইসব মুভি করে সো দ্যাট মানুষজন দেখে। এবং তাঁর মুভি সবাই দেখছে। সো প্রবলেম কই? আমাদের দেশে বাংলা কমারশিয়াল মুভি আগে শিক্ষিত লোকজন খুব কমই দেখত। ইদানিং কিন্তু তোমরা সবাই মুভি থিয়েটারে গিয়া গাঁটের পয়সা খরচ করে এসব দেখছ। সুতরাং আমি বলব অনন্ত জলিল যা করছে তা খুবই ভাল কাজই করছে। আগে অনেকেই শুধুমাত্র হিন্দি/ইংলিশ মুভি দেখত। বাংলাদেশের মুভি দেখত না। এখন থিয়েটারে গিয়ে দেখে। দেশের সরকার অথবা রাজনীতিবিদরা অনেকেই যা করতে পারে নাই। এই মানুষ টা একাই সেটা সম্ভব করেছে। ছোটবেলায় বিটিভি তে ছায়াছন্দ নামের একটা বাংলা মুভির গানের অনুষ্ঠান দেখাত। আমরা সবাই ঐ অনুষ্ঠান দেখতাম ঠিকই, কিন্তু শেষ হবার পর সেটা নিয়ে হাসাহাসি করতাম নিজেকে 'আমি খ্যাত নয়' প্রমান করার জন্য। সেই ছায়াছন্দ অনুষ্ঠান টি খুব সম্ভবত বিটিভির সবচেয়ে হিট অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা। অনন্ত জলিল এর মুভি খ্যাত অথবা হাস্যকর মানুষের কাছে লাগতেই পারে, কিন্তু সে কিন্তু হিট, তাঁর মুভিও হিট! টাকা কামাই হচ্ছে। সে যা করেছে, সেটা অবশ্যই আমার চোখে প্রশংসনীয়।
জনৈকঃ কিন্তু আপনিও তো তাঁর মুভি নিয়ে হাসাহাসি করেছেন।
আমিঃ অবশ্যই করেছি। হাসাহাসি করার জিনিস পেয়েছি তাই করেছি। কিন্তু তাঁর মানে এই নয় যে আমি এটা সাপোর্ট করি না। তাঁর মুভি পয়সা দিয়া দেখবো, মজা করব, হাসাহাসি করব এবং তাঁর এই ইনিশিয়েটিভের প্রশংসাও করব। জেমস বন্ড যখন অবাস্তব কাণ্ডকারখানা করার পর সেটা হজম করেছি, অনন্ত জলিল এর টাও হজম করব। হ্যাটস অফ টু হিম!
কথোপকথন ০৮
জনৈকঃ সুমন ভাই, আপনি কই?
আমিঃ কক্সবাজার
জনৈকঃ কক্সবাজারে কেন গেছেন?
আমিঃ না মানে, বাসায় পানি নাই, তাই ঢাকা থেকে এখানে সমুদ্রে গোসল করতে আসছি!
জনৈকঃ হিহিহি। সুমন ভাই আপনি যে মাঝে মধ্যে কি বলেন না!
আমিঃ যেমন প্রশ্ন করসো সেরকম উত্তর দিলাম। আমার মত একটা মানুষ কক্সবাজারে কেন আসব?
এইটা কি আমার শ্বশুর বাড়ি? আর কোন কুয়েশ্চন পাও না? পিতলা আলাপের আর কোন সাবজেক্ট নাই?
জনৈকঃ চেতেন কেন?
আমিঃ চেতি না। আই এম বিইং সারকাস্টিক
জনৈকঃ সারকাস্টিক কি?
আমিঃ আমি রাখি, গোসল করা শেষ হইলে কথা হবে (দীর্ঘশ্বাস)
কথোপকথন ০৯
জনৈকঃ ওয়াটস আপ ম্যান?
আমিঃ ছাঁদ
জনৈকঃ ছাঁদ মানে কি? ওয়াট আর ইউ টকিং অ্যাবাউট ব্রো?
আমিঃ তুমি জিগাইসো উপ্রে কি, আমার মাথার উপ্রে ছাঁদ, তাই কইলাম, ছাঁদ ইস আপ :-/
জনৈকঃ হাহাহাহা, সুমন ভাই, ইটস সো লেইম!
আমিঃ হ, ঠিকই কইসো? এল্লেইগাই ধরতে পার নাই আমার কথা
জনৈকঃ নো ব্রো, নট দ্যাট। এইসব জোকস খুবই লেইম। আপনাকে মানায় না
আমিঃ শোনো, বিলি শিহানের নাম জানো?
জনৈকঃ নো ব্রো। হু ইস হি?
আমিঃ বিলি শিহান হইল পৃথিবীর ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট পপুলার বেসিস্ট। প্রায় সব রক বেসিস্ট রাই তাকে গুরু মানে ইনক্লুডিং মি। একবার সিংগাপুরে তাঁর একটা কনসার্ট এ ব্যাকস্টেজে বসে তাঁর সাথে আড্ডা দিতেসিলাম। তাকে একজন এসে তোমার মত প্রশ্নটা করসিল। সে এই সেম আনসারটা দিসিল। এখন আমার কথা হইল, পৃথিবীর ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট পপুলার, রেস্পেক্টেবল রক বেস গিটারিস্ট যদি এই জোক টা করতে পারে, তাহলে তুমি কন চ্যাটের বাল আইসো আমারে বুঝাইতে যে কোনটা 'লেইম' আর কোনটা না?
জনৈকঃ না মানে ... ওয়াট আই মেন্ট ওয়াজ ...
আমিঃ ব্রো ... হ্যাভ সাম পাফড রাইস
জনৈকঃ জী?
আমিঃ ভাইয়া ... মুড়ি খাও
কথোপকথন ১০
জনৈকঃ হ্যালো, এটা কি ০১৭*******?
আমিঃ না, রং নাম্বার
যাইহোক, অনেক কথা লিখিলাম। আজ আর মাথায় কিছু আসিতেছে না। পরে আবার আসিব। সবাই ভাল থাকিবেন। :-)